নিজস্ব প্রতিবেদক :মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর উপাদান সিসা, অ্যান্টিবায়োটিক থাকায় বিএসটিআইয়ের লাইসেন্সধারী ১৪টি কোম্পানির সব পাস্তুরিত দুধ উৎপাদন, সংগ্রহ ও বিপণনের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন হাইকোর্ট।
পাঁচ সপ্তাহের জন্য এ নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে। একইসঙ্গে বাজারে বর্তমানে থাকা পাস্তুরিত দুধ কেনা ও বিক্রয়ে সতর্ক থাকতে বলেছেন আদালত।
রোববার বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ ও বিচারপতি মো. ইকবাল কবিরের হাইকোর্ট বেঞ্চ স্ব-প্রণোদিত হয়ে এই আদেশ দেন।
আদালতে বিএসটিআইয়ের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন ব্যারিস্টার সরকার এম আর হাসান। অন্যদিকে রিটের পক্ষে ছিলেন রিটকারী ব্যারিস্টার অনিক আর হক ও আইনজীবী মো. তানভীর আহমেদ।
এই ১৪ কোম্পানির মধ্যে রয়েছে আফতাব মিল্ক অ্যান্ড মিল্ক প্রোডাক্ট লিমিটেড, আকিজ ফুড অ্যান্ড বেভারেজ লিমিটেড, আমেরিকান ডেইরি লিমিটেড, বাংলাদেশ মিল্ক প্রোডিউসার কো-অপারেটিভ ইউনিয়ন লিমিটেড, বড়ো আউলিয়া ডেইরি মিল্ক অ্যান্ড ফুডস লিমিটেড, ব্র্যাক ডেইরি অ্যান্ড ফুড প্রোজেক্ট, ডেনিশ ডেইরি ফার্ম লিমিটেড, ইছামতি ডেইরি ফার্ম অ্যান্ড ফুড প্রোডাক্টস, ইগলু ডেইরি লিমিটেড, প্রাণ ডেইরি লিমিটেড, উত্তরবঙ্গ ডেইরি লিমিটেড, শীলাইদহ ডেইরি, পূর্ববাংলা ডেইরি ফুড ইন্ড্রাস্ট্রিজ এবং তানিয়া ডেইরি অ্যান্ড ফুড প্রোডাক্টস।
আদালতের আদেশের পর বিএসটিআইয়ের আইনজীবী সরকার এম আর হাসান বলেন, ‘আন্তর্জাতিক স্ট্যান্ডার্ড নিয়ে বিএসটিআই পাস্তুরিত দুধ পরীক্ষা করে থাকে। তবে আদালত দুধে কোনো ধরনের অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার থাকতে পারবে না বলে জনস্বার্থে একটি রুল জারি করেছেন। এখন আমাদের বিএসটিআই-এর দায়িত্ব হচ্ছে আদালতের রুলের জবাব তৈরি করা এবং দুধের মান বৃদ্ধি করা সম্পর্কে আদালতকে অগ্রগতি জানানো।’
তিনি বলেন, ‘কোর্টের আদেশের পর আমরা অবশ্যই বাজার মনিটরিং করব। আদালতের নির্দেশ রয়েছে, এসব দুধ বাজারজাত না করার। আজ থেকেই আমরা (বিএসটিআই) বাজার মনিটরিং শুরু করব এবং উদ্যোক্তাদেরও তাদের উৎপাদন ৫ সপ্তাহের জন্য বন্ধ রাখার বিষয়ে জানাবো।
বিএসটিআইয়ের আইনজীবী বলেন, ‘১৪ কোম্পানির মধ্যে যেসব দুধ ইতিমধ্যে বাজারজাত হয়েছে, কোর্টের আদেশের পর সেগুলো সরিয়ে ফেলতে হবে এবং তারা নিজ দায়িত্বে এটি করবে বলে আমি মনে করি। তবে এরপরও তারা মার্কেট থেকে দুধ তুলে না নিলে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ, বিএসটিআই তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেবে।’
এর আগে গত ১৪ জুলাই বিএসটিআইয়ের লাইসেন্সধারী প্রতিষ্ঠানের পাস্তুরিত দুধের নমুনা পরীক্ষা করে বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদের ল্যাবরেটরি, জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের ন্যাশনাল ফুড সেফটি ল্যাবরেটরি, বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউটের (সাভার) ল্যাবরেটরি এবং আইসিডিডিআরবিকে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে ওই সব ল্যাবরেটরিতে দুধে অ্যান্টিবায়োটিক, ডিটারজেন্ট, এসিডিটি, ফরমালিন ও অন্যান্য ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি আছে কি না- তা পরীক্ষা করার নির্দেশ দেন। এছাড়াও ওই প্রতিবেদন পৃথক পৃথকভাবে আদালতে দাখিল করতে বলা হয়।
আদেশের পর চারটি ল্যাবরেটরিতে দুধের নমুনা পরীক্ষার প্রতিবেদন হাইকোর্টে দাখিল করা হয়। তবে আইসিডিডিআরবি ব্যতিত অবশিষ্ট তিনটি প্রতিষ্ঠানের প্রতিবেদন পর্যালোচনা শেষে আদালত ১৪ কোম্পানির প্রতিষ্ঠানের পাস্তুরিত দুধ উৎপাদন বন্ধের নির্দেশ দিলেন।