শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে চলমান ক্রিকেট সিরিজে বাংলাদেশ স্বাগতিক দলের বিপক্ষে প্রথম দুটি ম্যাচেই হেরেছে বেশ বড় ব্যবধানে। আর এ দু’টো ম্যাচেই যে বিষয়টি দেখা গেছে, তাহলো দলের ক্যাপ্টেন তামিম ইকবালের একেবারেই অল্প রানে আউট হওয়া।
তবে তারচেয়েও বেশী চোখে লেগেছে দুটো ম্যাচেই তামিম ইকবালের বোল্ড আউট।
প্রথম ম্যাচে লাসিথ মালিঙ্গা আর দ্বিতীয় ম্যাচে ইসুরু উদানার বলে আউট হওয়ার আগে তামিম পিচেও লুটিয়েছেন ইয়র্কার লেংথের বল সামলাতে গিয়ে।
এ নিয়ে তামিম ইকবাল টানা ছয় ম্যাচে বোল্ড হলেন, যা বিশ্ব ক্রিকেটে একটি রেকর্ড।
ওয়ানডে ক্রিকেটে কোনো ওপেনারই টানা ছয় ম্যাচে বোল্ড হওয়া দূরের কথা, কেউ এমনকি টানা পাচঁ ম্যাচেও বোল্ড হননি।
শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজের প্রথম ম্যাচে ০ ও দ্বিতীয় ম্যাচে ১১ রানে আউট হন তামিম।
তামিম ইকবাল কি দলের বোঝা?
বাংলাদেশী ওপেনারের সাম্প্রতিক ফর্ম দলে তার অন্তর্ভূক্তিকেই প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। বিশ্বকাপেও তামিমের পারফরম্যান্স নিয়ে সমালোচনা হয়েছে, তবে দলের নিয়মিত অধিনায়ক মাশরাফী বিন মোর্ত্তজার অনুপস্থিতিতে তাকেই শ্রীলঙ্কা সফরে দলের ক্যাপ্টেন বানিয়ে দেয়া হয়ে।
তামিম ইকবালের শৈশবের ক্রিকেট শিক্ষক নাজমুল আবেদীন ফাহিম। তিনি অবশ্য মনে করেন, তামিম দলের বোঝা নন।
“সমস্যা আছে অবশ্যই তামিমের, ওর আত্মবিশ্বাসে সবচেয়ে বড় সমস্যা। সে ফুটওয়ার্ক, টাইমিং এসব নিয়ে দ্বিধায় ভোগে। তবে দলের জন্য বোঝা, এটা ভাবা ভুল।”
কিছু কিছু খেলোয়াড়ের ক্ষেত্রে অনেক বেশি সমালোচনা হলে তাদের ফিরে আসাটা কঠিন হয়ে পড়ে বলে মনে করেন বর্তমানে বিসিবির জন্য কাজ করা এই কোচ।
নাজমুল আবেদীন ফাহিম বলেন, “তামিমকে ছাড়া বাংলাদেশ ক্রিকেট দল আরো কিছুদিন চলতে পারবে না, কারণ তার একজন যোগ্য পরিবর্তন প্রয়োজন।”
“তামিমের যথেষ্ট অভিজ্ঞতা আছে, অনেক বছর ধরে ভালো ক্রিকেট খেলেছেন। তাই আমার কাছে মনে হয় ঠিকমতো সমস্যা নিয়ে কাজ করলে, তার জন্য ফিরে আসা সহজ হবে।”
বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক ও সাবেক প্রধান নির্বাচক ফারুক আহমেদ বলেন, “আমার মনে হয় খুবই খারাপ সময় যাচ্ছে ওর। ওকে বাদ দেয়ার চিন্তা না করে বরং কত তাড়াতাড়ি ফর্মে ফিরতে পারে তা ভাবা উচিত। ওর জায়গায় কে ভালো খেলছে এটা দেখতে হবে।”
“এমন যদি হতো অন্য রিপ্লেসমেন্ট আছে, সেক্ষেত্রে বাদ দেয়া যেতে পারে। এখন বয়সের প্রাইম টাইমে আছেন তিনি। বিকল্প তৈরি না করে বাদ দিলে আত্মঘাতী হতে পারে,” বলছেন ফারুক আহমেদ।
ক্রিকেট সাংবাদিক আরিফুল ইসলাম রনি মনে করেন, দু’টো বা একটি সিরিজ খারাপ খেললে একজন সিনিয়র ক্রিকেটারকে বাদ দেয়া দলের জন্য ভালো দৃষ্টান্ত হবে না।
তিনি বলেন, “বিশ্বকাপে তামিম ভালো শুরু করে শেষ ভালো করতে পারেনি। দলের সবচেয়ে সফল ব্যাটসম্যানের ওপর ভরসা রাখতে হবে। চার বছর ভালো সার্ভিস দেওয়ার পর চার-পাচঁ ম্যাচের ব্যর্থতায় বাদ দিলে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি করবে।”
তবে আরিফুল ইসলাম রনি মতে, শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে চলমান সিরিজে হয়েতো তামিম ইকবালকে বিশ্রাম দেওয়ার সুযোগ ছিল, যা নির্বাচকরা ভেবে দেখতে পারতেন।
“সিনিয়র কোনো ক্রিকেটারকে একটা-দুটো সিরিজ খারাপ খেললেই বাদ দেয়া কঠিন, এটা ঠিক না যে সে আজীবন খেলেই যাবে। একজন তরুণ ক্রিকেটারের চেয়ে তামিমের খানিকটা বেশি সময় প্রাপ্য, কিন্তু তার মানে এই নয় টানা পাঁচ সিরিজ খারাপ খেললেও তাকে খেলাতে হবে।”
তবে বাংলাদেশের ক্রিকেট ফ্যানদের অনেকেই তামিমের সাম্প্রতিক পারফরমেন্সে খুবই হতাশ।

তামিম ইকবালের খারাপ সময়
তামিম ইকবালের ব্যাটিং নিয়ে সমালোচনা শুরু হয় মূলত বিশ্বকাপের সময়। অনেকটা নিয়মিতভাবে ভালো শুরু করেও শেষ পর্যন্ত বড় রান করতে ব্যর্থ হন তিনি।
কিন্তু তারও আগে থেকেই মূলত তার ব্যর্থতার শুরু – সেই নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজ থেকেই। সেই সিরিজে তিনটি ওয়ানডে ম্যাচে তামিমের রান যথাক্রমে ৫, ৫, ০।
এর আগে টানা চার বছর ফর্মে ছিলেন তামিম। কিন্তু প্রশ্ন ছিল তার স্ট্রাইক রেট নিয়ে – তার থিতু হওয়ার ধরণ অন্য ব্যাটসম্যানের ওপর চাপ ফেলে, এমন অভিযোগও ছিল।
বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৬২ রানের ইনিংস ছাড়া আর কোনো পঞ্চাশোর্ধ ইনিংস নেই তামিমের।

কেবল অস্ট্রেলিয়া এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষেই তামিম ইকবালের স্ট্রাইক রেট ৮০ অতিক্রম করে।
স্ট্রাইক রেট ও ব্যাট হাতে ফর্মে না থাকা ছাড়াও কখনো কখনো তামিম নন-স্ট্রাইকার ব্যাটসম্যানকে রান নেওয়ার আহ্বান জানিয়েও ফিরে গিয়েছেন ক্রিজে, ফলে বলি দিতে হয়েছে নন-স্ট্রাইকারের উইকেট – এমন অভিযোগও আছে তার বিরুদ্ধে।
তামিম ইকবাল শেষবার শতক হাঁকিয়েছেন ২০১৮ সালের ২৮শে জুলাই – এক বছর আগে। ওই সিরিজে তামিম ইকবালের দুটো শতক ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে।
এরপর তামিমের সর্বোচ্চ অপরাজিত ৮১ ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষেই – সিলেটে।
তবে তামিম কিছুটা ভালো করেছিলেন আয়ারল্যান্ডে ত্রিদেশীয় টুর্নামেন্টে। ডাবলিনে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ২৬১ রান তাড়া করতে নেমে তামিম করেন ১১৬ বলে ৮০ রান, সেই একই ইনিংসে বাকি তিন ব্যাটসম্যানই ১০০-এর ওপর স্ট্রাইক রেটে ব্যাট করে ৫ ওভার বাকি থাকতে ম্যাচ জেতান।