আশির দশকের মাঝামাঝিতে পিৎজা বা ডোনাটের মতো কিছু খাবার বা চকলেট প্রস্তুতে সহায়তার উদ্দেশে উদ্ভাবিত হয়েছিল বিশেষ প্রযুক্তির থ্রি-ডি প্রিন্টার। সে প্রিন্টারে ভোজনরসিকরা নিজেদের সুবিধা মতো যেকোনো আকার-আকৃতির আর বিভিন্ন নকশায় খাবার প্রস্তুত করতে পারেন। এর মাঝে পেরিয়ে গেছে অনেকদিন। প্রযুক্তির উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে এবার আরও অনেক সুযোগ-সুবিধা যোগ হয়েছে এসব প্রিন্টারে।
আজকের দিনে বিশ্বের অনেক দেশেই বিভিন্ন রেস্তোরাঁ বা রান্না ঘরে শোভা পাচ্ছে থ্রি-ডি ফুড প্রিন্টার। বলা চলে, এখন যেকোনো খাবারই প্রস্তুত করা যায় এ প্রিন্টারে। কিন্তু এতোদিন ধরে একটি জায়গায় খামতি ছিল। কেবলমাত্র রান্নার আগের ধাপ পর্যন্ত অর্থাৎ কাঁচা খাবার বানানো যেতো থ্রি-ডি প্রিন্টারে।
কিন্তু সম্প্রতি এ প্রিন্টারে তাপযন্ত্র ব্যবহার করে সেদ্ধ করা বা রান্না হওয়ার মতো খাবার বানানো নিয়ে গবেষণা চলছে। আর সত্যি বলতে কী, সেই পথে অনেক দূর এগিয়েও গেছে একদল গবেষক। আগামী এক বছরের মধ্যে বাণিজ্যিকভাবে খাবার রান্না করা যায় এমন প্রিন্টার বাজারজাত করা যাবে বলেও অনেকের ধারণা।
যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক এ নিয়ে কাজ করছেন। তারা এমন প্রযুক্তির থ্রি-ডি প্রিন্টার উদ্ভাবনের চেষ্টা করছেন, যাতে করে মেশিনটি ভোক্তার চাহিদা অনুযায়ী একের পর এক খাবার সরবরাহ করতে পারে। এ ধরনের প্রিন্টার উদ্ভাবিত হলে আগামী দিনের মানুষের খাদ্যাভ্যাস অনেকটাই বদলে যাবে বলে মনে করা হচ্ছে।
কলাম্বিয়া ইঞ্জিনিয়ারিং ল্যাবে এ নিয়ে গবেষণা চালাচ্ছেন জোনাথন ব্লুটিঙ্গার ও তার সহকর্মীরা। তারা এমন একটি প্রিন্টার মেশিন উদ্ভাবন করেছেন, যেটি একইসঙ্গে খাবার প্রস্তুত ও তাপযন্ত্রের মাধ্যমে রান্নার কাজটি করবে। রান্নার কাজে দলটি ব্যবহার করছে বিশেষ প্রযুক্তির লেজার হিটিং সিস্টেম। যা প্রয়োজন মতো তাপ নিয়ন্ত্রণে সক্ষম।
ব্লুটিঙ্গার জানান, তারা এমন একটি সফটওয়্যার বানানোর চেষ্টা করছেন, যেটি ভোক্তার চাহিদা অনুসারে এক টানা কাজ করে যেতে পারবে। যে কেউ পছন্দ অনুযায়ী খাবারে ভিটামিন বা অন্য কোনো উপাদান বাড়িয়ে কমিয়ে ইচ্ছে মতো ঘরে বসেই বানাতে পারবেন। এছাড়া এরইমধ্যে এ গবেষক দল লেজার হিটিং সিস্টেম ব্যবহার করে বেশ কিছু স্ন্যাকস বানাতেও সক্ষম হয়েছে।
নতুন প্রযুক্তির এ রকম ফুড প্রিন্টারের ব্যবহার নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে চলছে নানা রকম কথা। কেউ কেউ এটা নিয়ে উত্তেজিত হলেও অনেকে আবার এটিকে মানুষের খাদ্যাভ্যাসে যন্ত্রের বাড়তি হস্তক্ষেপ হিসেবে দেখছেন।