বাংলাদেশে ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি সংস্থা বিভিন্নভাবে জনসচেতনতামূলক প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে। তবে এর মধ্যে বেশ কিছু জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যাপক সমালোচনা তৈরি করেছে।
সম্প্রতি সিনেমার তারকাদের সাথে বাংলাদেশের একজন মন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কয়েকজনের জনসচেতনতামূলক পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রমের ভিডিও সমালোচিত হয়েছে সামাজিক মাধ্যম, বিশেষ করে ফেসবুকে।
ঐ ভিডিওতে দেখা যায়, বাংলাদেশের কয়েকজন সিনেমা তারকাদের সাথে তারা রাস্তা ঝাড়ু দিচ্ছেন এবং মশার ওষুধ দিচ্ছেন।
সামাজিক মাধ্যমে এই ধরণের কার্যক্রমকে অনেকেই ‘লোক-দেখানো’ এবং ‘অপ্রয়োজনীয়’ বলে অভিহিত করেছেন।
বাংলাদেশের একজন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মোহাম্মদ আবদুস সবুরও মনে করেন, এমন পরিস্থিতিতে এই ধরণের জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম খুব একটা কার্যকর ভূমিকা পালন করবে না।
“দুঃখজনকভাবে সত্যি যে, প্রচার প্রচারণার যে ভঙ্গি দেখছি সেই অনুযায়ী কার্যকরী ব্যবস্থা নিতে দেখছি না,” বিবিসিকে বলেন মি. সবুর।
আবদুস সবুরের মতে, দুর্যোগকালীন পরিস্থিতিতে সাধারণত দুর্যোগে আক্রান্তদের সহায়তা এবং দুর্যোগ ছড়িয়ে না পড়ার জন্য ব্যবস্থা নিশ্চিত করা প্রয়োজন হয়।
“ডেঙ্গু পরিস্থিতিতে, এই দুই ক্ষেত্রেই বেশকিছু পদক্ষেপ নেয়া হলেও ব্যবস্থাপনার ঘাটতি এবং সমন্বয়হীনতার কারণে সেসব পদক্ষেপের কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে,” – বলেন মি. সবুর।
“ঝাড়ু দেয়া বা পরিস্কার পরিচ্ছন্নতার বিষয়টি করা হয়েছে মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে। কিন্তু আমাদের জনস্বাস্থ্য অভিজ্ঞতা বলে যে মানুষকে সচেতন করলেই যে তারা সচেতন হয়ে তা পালন করবে, এমন কোন কথা নেই।”
সচেতনতা বাড়ানোর কার্যক্রম চালানোর পাশাপাশি আইন প্রয়োগ করে মানুষকে বাধ্য করা হলে তা কিছুটা কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে বলে মনে করেন মি. সবুর।
আরো পড়তে পারেন:
ডেঙ্গুর আতঙ্ক নিয়ে কাজ করছেন ডাক্তার-নার্সরা
শিশুর ডেঙ্গু হয়েছে কিনা কিভাবে বুঝবেন, করণীয় কী
‘চিকিৎসকদের ছুটি বাতিল কার্যকর পদ্ধতি নয়’
গত কয়েক মাসে ডেঙ্গু পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় সরকারি হাসপাতালগুলোতে রোগীদের ব্যাপক চাপ তৈরি হয়েছে।
এই চাপ সামাল দিতে জুলাই মাসে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীর ছুটি বাতিল করার ঘোষণা দেয়া হয়।
কিন্তু চিকিৎসকদের ছুটি বাতিল করে ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ কতটা কার্যকরভাবে করা যাবে, তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেন মি. সবুর।
“ডাক্তার-নার্সরাও তো মানুষ, তাদেরও তো ব্যক্তিগত জীবন ও পরিবার রয়েছে।”
মি. সবুরের মতে, একজন চিকিৎসককে দিয়ে টানা ডিউটি না করিয়ে এই সমস্যা নিরসনে নতুন লোকবল নিয়োগ দেয়ার বিষয়টি চিন্তা করে দেখা যেতে পারে।
“হাসপাতালে যখন অতিরিক্ত সংখ্যক রোগী ভর্তি হচ্ছে এবং সেখানকার ডাক্তারদের ওপর চাপ তৈরি হচ্ছে, তখন রোগীর চাপ সামাল দিতে আরো বেশি ডাক্তার নিয়োগ দেয়া উচিত।”
বিভিন্ন মেডিকেল কলেজগুলোর জুনিয়র ডাক্তার, লেকচারার – যারা মেডিকেল কলেজের শিক্ষক হিসেবে নিয়োজিত রয়েছেন – তাদেরকে জরুরি ভিত্তিতে হাসপাতালের দায়িত্বে নিয়োগ দেয়া উচিত বলে মন্তব্য করেন মি. সবুর।
সেক্ষেত্রে কিছুদিন মেডিকেল কলেজগুলো বন্ধ রাখতে হবে।
মি. সবুর বলেন, “১৯৮৮ সালে আমি ঢাকার ডেপুটি সিভিল সার্জন থাকার সময় ঢাকায় বন্যা পরিস্থিতি যখন খারাপ হয়, তখন বন্যার্তদের সেবা প্রদান নিশ্চিত করতে মেডিকেল কলেজগুলো বন্ধ করে কলেজের লেকচারারদের জরুরি সেবায় নিয়োগ দেয়ার আবেদন করেছিলাম।”
“ঐ সিদ্ধান্তের কারণে সেসময় অতিরিক্ত পাঁচশো থেকে সাতশো ডাক্তারের সেবা পাওয়া সম্ভব হয়েছিল।”