বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে আমদানি-রফতানিতে গতি বাড়ানো হচ্ছে। এজন্য নির্মাণ করা হবে একটি নতুন ভেহিকেল টার্মিনাল। এজন্য ‘বেনাপোল স্থলবন্দরে কার্গো ভেহিকেল টার্মিনাল নির্মাণ’ শীর্ষক একটি প্রকল্প হাতে নিচ্ছে বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ।
এটি বাস্তবায়নে ব্যয় হবে ২৮৯ কোটি ৬৮ লাখ টাকা। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে প্রায় ১ হাজার ২৫০টি পণ্যবাহী ট্রাক পার্কিং সম্ভব হবে। এই স্থলবন্দরের মাধ্যমে দেশে আগত পণ্যবাহী গাড়ি সংরক্ষণ ও আমদানি-রফতানি কাজে গতিশীলতা আনয়ন এবং স্থলবন্দর ও সংলগ্ন এলাকার যানজট নিরসন হবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম প্রধান (পরিকল্পনা) রফিক আহম্মদ সিদ্দিক রোববার যুগান্তরকে জানান, আমরা বোনাপোল বন্দরে ব্যাপক উন্নয়ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করেছি। এই মুহূর্তে বন্দরটি অটোমেশনে চলছে। তারই অংশ হিসেবে এই ভেহিকেল টার্মিনাল নির্মাণের প্রস্তাব করা হয়েছে। এটি নির্মাণের পর বেনাপোল দেশের অন্যতম একটি বন্দরে পরিণত হবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই।
পরিকল্পনা কমিশনের একাধিক কর্মকর্তা যুগান্তরকে জানান, প্রকল্পটির প্রস্তাব পাওয়ার পর চলতি বছরের ২৩ জানুয়ারি পরিকল্পনা কমিশনে প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা অনুষ্ঠিত হয়।
ওই সভায় দেয়া সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন করে উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) পুনর্গঠন করা হয়েছে। ফলে আগামী জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় উপস্থাপন করা হতে পারে।
অনুমোদন পেলে চলতি বছর থেকে ২০২১ সালের জুনের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বাংলাদেশ প্রায় ৪ হাজার ৯৫ কিলোমিটার ভারতের সঙ্গে, ২৫৬ কিলোমিটার মিয়ানমারের সঙ্গে এবং ৫৮০ কিলোমিটার সমুদ্র সীমানা দ্বারা বেষ্টিত।
ভারত সীমানায় স্থলপথে আমদানি-রফতানি তথা বাণিজ্যিক কার্যক্রম সম্পাদনের জন্য বেনাপোল স্থলবন্দর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং সর্ববৃহৎ স্থলবন্দর। এ স্থলবন্দর ব্যবহার করে স্থলপথে প্রায় ৮০ শতাংশ আমদানি-রফতানি বাণিজ্য সম্পন্ন হয়ে থাকে।
এ বন্দরের মাধ্যমে প্রতিবছর প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকার মালামাল আমদানি-রফতানি হয়ে থাকে এবং সরকার প্রতিবছর প্রত্যক্ষভাবে প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা আয় করে থাকে। প্রতিদিন ৪০০-৫০০ ভারতীয় পণ্যবাহী ট্রাক এবং ৫০০-৬০০টি বাংলাদেশি ট্রাক বন্দরে আগমন করে।
ভারতীয় পণ্যবাহী ট্রাক বাংলাদেশে প্রবেশের পর টার্মিনালে অবস্থান করার কথা। কিন্তু বর্তমানে ব্যবহারযোগ্য কোনো টার্মিনাল না থাকায় অধিকাংশ পণ্যবাহী ট্রাক সড়কের ওপর পার্কিং করে থাকে। স্থান সংকুলান ও অবকাঠামো স্বল্পতার কারণে বন্দরের অপারেশনাল কাজে বিঘ্ন সৃষ্টি হচ্ছে।
সার্বিক সমস্যা সমাধানের জন্য জমি অধিগ্রহণ করে অ্যাপ্রোচ রাস্তাসহ একটি কার্গো ভেহিকেল টার্মিনাল নির্মাণ করা প্রয়োজন। এজন্য অ্যাপ্রোচ রাস্তাসহ ২৯ দশমিক ১০ একর জায়গায় কার্গো ভেহিকেল নির্মাণের প্রস্তাব করা হয়েছে।
প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে বাণিজ্য সম্প্রসারণ এবং সরকারি রাজস্ব আদায়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে সহায়তা দেয়ার জন্য জমি অধিগ্রহণ করে এই বন্দরে একটি কার্গো ভেহিকেল টার্মিনাল উন্নয়নের জন্য প্রস্তাবিত প্রকল্পটি নেয়া হয়েছে।
প্রকল্পের আওতায় প্রধান কার্যক্রম হচ্ছে- ২৯ দশমিক ১০ একর জমি অধিগ্রহণ, ২ লাখ ৪৫৬ হাজার ৯৭ ঘনমিটার ভূমি উন্নয়ন, ২১০০ মিটার সীমানাপ্রাচীর নির্মাণ, ৬ হাজার বর্গমিটার অভ্যন্তরীণ রাস্তা নির্মাণ, ১ লাখ ৪৭ হাজার পার্কিং ইয়ার্ড, ১ হাজার ৭৪৭ বর্গমিটার ভবন নির্মাণ, তিনটি টয়লেট দুটি মেইন গেট, গেট হাউস ও সিকিউরিটি সিস্টেম, চারটি ওয়াচ টাওয়ার, ১ হাজার ৬৫০ মিটার ড্রেন নির্মাণ এবং ১৭ হাজার ঘনমিটার পুকুর খননসহ আনুষঙ্গিক কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হবে।