রাষ্ট্রপক্ষের নিয়োজিত আইনজীবী আসামির পক্ষ নেওয়ায় বিচারক ইশরাত জাহান ক্ষোভ প্রকাশ করেন এবং আবেদনটি নামঞ্জুর করেন।
বগুড়ার সারিয়াকান্দিতে ১৪ বছর আগে গৃহবধু জোবেদা হত্যা মামলায় বিদেশে পালিয়ে যাওয়া চার্জশিটভুক্ত আসামি সানোয়ারুল ইসলাম সানাকে বাঁচাতে আবেদন করেছেন অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতের অতিরিক্ত পিপি (প্রস্তাবিত) শাহাদত হোসেন।
রাষ্ট্রপক্ষের নিয়োজিত আইনজীবী আসামির পক্ষ নেওয়ায় বিচারক ইশরাত জাহান ক্ষোভ প্রকাশ করেন এবং আবেদনটি নামঞ্জুর করেন।
গত ১৮ এপ্রিলের ওই আবেদনের কথা বুধবার (৭ আগস্ট) জানাজানি হলে আদালতপাড়ায় ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়।
এ প্রসঙ্গে অভিযুক্ত অতিরিক্ত পিপি শাহাদত হোসেন বলেন, “রাষ্ট্রপক্ষীয় আইনজীবী হিসেবে আসামির পক্ষ নিয়ে আবেদন করা ভুল হয়েছিল। তাই এটি প্রত্যাহারে আবেদন করেছি; ২-১ দিনের মধ্যে ঠিক হয়ে যাবে।”
তিনি দাবি করেন, গত ১ আগস্ট আদালত চত্বরে বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের দু’পক্ষের মধ্যে হাতাহাতি হয়। তিনি অ্যাডভোকেট রেজাউল করিম মন্টুর পক্ষ নেওয়ায় এবং পিপি হিসেবে তার নামের প্রস্তাব যাওয়ায় অ্যাডভোকেট নরেশ মুখার্জিরা এসব অপপ্রচার চালাচ্ছেন। আর এখানে আসামির কাছ থেকে আর্থিক কোনো সুবিধা নেবার ঘটনা ঘটেনি।
এজাহার সূত্র জানায়, গত ২০০৫ সালের ১৮ আগস্ট বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলার নারচি তরফদারপাড়া গ্রামে সেফটিক ট্যাংক থেকে নিখোঁজ গৃহবধু জোবেদার (৪০) লাশ উদ্ধার হয়। পরদিন তার ভাই মোখলেছার রহমান অজ্ঞাতদের বিরুদ্ধে হত্যা ও লাশ গুমের মামলা করেন। তদন্তকারী কর্মকর্তা ২০০৬ সালের ২২ এপ্রিল আদালতে ৫ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেন। মামলাটি (নং-৩০১/০৭ দায়রা) বিচারের জন্য দ্বিতীয় অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতে পাঠানো হয়। মামলায় অকি প্রামানিক, গোকুল প্রামানিক, অহিদুল ইসলাম ও আবদুল বাসেদ মোল্লা বিভিন্ন সময় গ্রেপ্তার হন। পরবর্তী সময়ে গ্রেফতারকৃতরা জামিনে ছাড়া পান। মামলার অপর আসামি সানোয়ারুল ইসলাম সানা শুরু থেকে পলাতক। বিভিন্ন সূত্র জানায়, বর্তমানে তিনি সৌদি আরব প্রবাসী। আদালত তার অনুপস্থিতিতে বিচার কাজ শেষ করার নির্দেশ দিয়েছেন। রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী অতিরিক্ত পিপি শাহাদৎ হোসেন মোট ১২ জন সাক্ষীর জেরা সম্পন্ন করেন। মামলাটি রায় ঘোষণার অপেক্ষায় আছে।
এদিকে অতিরিক্ত পিপি শাহাদৎ হোসেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী হওয়া সত্ত্বেও অজ্ঞাত কারণে পলাতক আসামি সানোয়ারুল ইসলাম সানার পক্ষ নেন। তিনি গত ১৮ এপ্রিল আদালতে জমা দেওয়া আবেদনে পলাতক আসামির ক্ষতি হবে মর্মে ১২ সাক্ষীকে দ্বিতীয়বারের মত জেরার আবেদন করেন। গত ১ আগস্ট আবেদনটি বিচারক ইশরাত জাহানের নজরে এলে তিনি রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীর এহেন ভুমিকার জন্য ক্ষোভ প্রকাশ ও আবেদনটি বাতিল করেন।
বুধবার ঘটনাটি জানাজানি হলে বগুড়ার আদালতপাড়ায় আইনজীবীদের মাঝে ব্যাপক আলোচনা ও সমালোচনার সৃষ্টি হয়। অনেকে মন্তব্য করেন, অতিরিক্ত পিপি ও প্রস্তাবিত পিপি শাহাদৎ হোসেন ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ করেছেন। কেউ কেউ বলেন, সৌদি প্রবাসী পলাতক আসামির কাছে মোটা অংকের সুবিধা নিয়ে ওই আবেদন করা হয়েছে।
বগুড়ার ভারপ্রাপ্ত পিপি নুরুল সালাম সাগর বলেন, “অতিরিক্ত পিপি শাহাদৎ হোসেনের কাজটি বে-আইনি ও অন্তর্ঘাতমূলক। শিগগিরই বিষয়টি উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে।”