Home জাতীয় যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশ পুনর্গঠন শুরু করেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশ পুনর্গঠন শুরু করেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানের কারাগার থেকে দেশে ফিরেই দ্রুত যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশ পুনর্গঠন শুরু করেন এবং সফলভাবে সদ্য স্বাধীন দেশের অর্থনৈতিক এবং অর্থনীতির বাইরের উভয় খাতের গভীরে প্রথিত বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করেন।

বঙ্গবন্ধুর ওপর প্রকাশিত সংবাদপত্রের রিপোর্ট এবং প্রকাশিত গ্রন্থে বলা হয়, অভ্যন্তরীণ এবং বৈদেশিক সম্পদের পর্যাপ্ত সহবরাহ, অবকাঠামো পূননির্মাণ, যুদ্ধে সর্বস্বহারা লাখ লাখ লোকের পুনর্বাসন এবং আর্থিক, শিল্প ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসমূহ পুনরুজ্জীবন ছিল বঙ্গবন্ধুর সামনে প্রধান চ্যালেঞ্জ।

অর্থনৈতিক খাতের বাইরে অন্যান্য চ্যালেঞ্জ ছিল নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, সুশাসন এবং বিশ্বের দেশগুলোর সঙ্গে কার্যকর কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা।

স্বাধীনতা যুদ্ধের শেষ দিকে পাকিস্তানী দখলদার বাহিনী পরিকল্পিতভাবে দেশের অবকাঠামো পরিকল্পিতভাবে ধ্বংস করে দেয়। এরফলে স্বাধীনতার পরে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পারেনি।

১৯৭২ সালে প্রথম বিজয় দিবসে তথ্য মন্ত্রণালয়ের সুভেনিয়রে প্রকাশিত নিবন্ধে বলা হয়, তিনশ’র বেশি রেলসেতু এবং তিনশ’ বেশি সড়ক সেতু যুদ্ধকালে পাকিস্তানী বাহিনী ধ্বংস করেছে। ২৯ টি জাহাজ ডুবিয়ে বন্দরের প্রবেশপথ অচল করে দেয়ায় চট্টগ্রাম বন্দর বন্ধ হয়ে যায়।

পলায়নরত পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী বন্দরের চ্যানেলে মাইন পুঁতে যাওয়ার কারণেও দেশের প্রধান এই সমুদ্র বন্দর ব্যবহার অনুপোযোগী হয়ে পড়ে। তারা আত্মসমর্পণের আগে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নগদ টাকা ও মজুদ স্বর্ণ জ্বালিয়ে দেয় এবং পশ্চিম পাকিস্তানের শিল্পপতিরা প্রায় ৮শ’ কোটি টাকা সরিয়ে নেয়। এতে সদ্য স্বাধীন হওয়া এই দেশটি অর্থশূন্য হয়ে পড়ে।

সুভেনিয়রে উল্লেখ করা হয়, পাকিস্তানী দখলদার বাহিনীর ধ্বংসাত্মক কার্যক্রমে কৃষিখাতে ৩৭৬ কোটি টাকাসহ দেশের ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছিল ১২০ কোটি টাকা।

অর্থনৈতিক এই দুর্বল অবস্থার মধ্যেই দেশে নবগঠিত কতিপয় গ্রুপ তাদের অশুভ উদ্দেশ্য পূরণে রাজনৈতিক বিপন্ন পরিস্থিতি তৈরি ও সামাজিক বিপর্যয় সৃষ্টির চেষ্টা চালায়। বঙ্গবন্ধু তাদের কঠোর ভাষায় সাবধান করে দেন এবং একই সময়ে বিপুলসংখ্যক উন্নয়ন কার্যক্রম এবং নীতি পরিকল্পনা গ্রহণের মাধ্যমে জাতি পুনর্গঠন শুরু করেন।

বাংলাদেশ অবজারভারের প্রথম পাতায় ১৯৭৫ সালের ১৫ জানুয়ারি প্রকাশিত রিপোর্টে বলা হয়, বঙ্গবন্ধু ত্রাণ ও পুনর্বাসনকে অগ্রাধিকার দিয়ে নতুন অর্থনৈতিক রূপরেখা প্রণয়ন করেছেন। দৈনিক বাংলার ১৯৭৫ সালের ২৬ জানুয়ারি রিপোর্টে বলা হয়, গৃহহীন মানুষের জন্য বঙ্গবন্ধু ৩ কোটি টাকা বিশেষ বরাদ্দ দিয়েছেন।

মহান মুক্তিযুদ্ধের বীর মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিযুদ্ধে সর্বস্ব হারানো নারী, শিশু ও অন্যদের জন্য বঙ্গবন্ধু ১৯৭২ সালের জুন মাসে ১ লাখ ৬৬ হাজার বাড়ি নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিলেন।

বঙ্গবন্ধু সরকার ১৯৭২ সালে ৫ শত কোটি টাকার প্রথম বাজেট ঘোষণা করেন। বাজেটে কৃষি ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি বরাদ্দ রাখা হয়, এর পর শিক্ষা ও সামাজ কল্যাণে বেশি বাজেট বরাদ্ধ রাখা হয়েছিল।

সার ও শিশু খাদ্যের উপর শুল্ক প্রত্যাহার করা ও তুলা থেকে তৈরি সুতার এবং পানির পাম্পের উপর থেকে কর কমানোর সিদ্ধান্ত ছিল বাজেটে পুর্নগঠন প্রক্রিয়ার অংশ। শিশুদের জন্য সুষম খাদ্য নিশ্চিত করতে সার ও শিশু খাদ্য সরবারাহকারী কৃষকদের কর আরোপ করা হয়নি। সাধারণ জনগণ যাতে সহজে কাপড় সংগ্রহ করতে পারেন তার জন্য সূতি কাপড়ের উপর কম করে কর ধার্য করা হয়।

বঙ্গবন্ধুর বিশেষ উদ্যোগে পরের বছরই ৪ হাজার ৪৫৫ কোটি টাকার প্রথম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার ঘোষণা করা হয়।

বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে সরকার দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা ও বিদুৎ বিতরণ পুরুদ্ধার করার লক্ষ্যে দেশের বড় বড় সেতু, বিদুৎ কেন্দ্র, টেলিফোন ভবন পুনঃনির্মাণের কাজ শুরু করেন। যা ছিল দেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক বিষয়।

পরবর্তী বছরগুলোতে সরকার হার্ডিঞ্জ ব্রীজ, তিস্তা ও ভৈরব রেলওয়ে ব্রীজ পুনঃনির্মাণ করে যানবাহনের জন্য খুলে দেয়।

চট্রগ্রাম বন্দর থেকে মাইন ও ভাঙ্গা জাহাজ অপসারণ করে বন্দর চলাচলের যোগ্য করে তোলা হয়।

বঙ্গবন্ধু একই সাথে যমুনা নদীর উপর ব্রীজ নির্মাণের প্রক্রিয়া শুরু করেন।

শিল্প খাতের জন্য বঙ্গবন্ধু সরকার দীর্ঘ মেয়াদী শিল্প ঋণ প্রদানের নীতিমারা গ্রহণ করেন। বিনিয়োগকারীদের জন্য চলমান কাজের জন্য স্বল্প মেয়াদি মূলধন ঋণ প্রদান ও ইক্যুইটি সার্পোট দেয়া হয়।

বঙ্গবন্ধু পরমাণু শক্তি কমিশন, বিজ্ঞান গবেষণা পরিষদ, শিল্পঋণ সংস্থা, কৃষি গবেষণা কাউন্সিল প্রতিষ্ঠা করেন। এই সব প্রতিষ্ঠান বর্তমানে দেশের উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা পালন করছে।

বঙ্গবন্ধুর অপর পদক্ষেপ ছিল সরকার গঠনের পর দ্রুততম সময়ে বিভিন্ন দেশের সাথে কার্যকরী কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করার কাজ। বঙ্গবন্ধুর সফল প্রচেষ্টার কারণে জাতিসংঘ যুদ্ধ-বিধ্বস্ত পরবর্তী বাংলাদেশ পুনঃগঠনের সহায়তার জন্য ৪১১ কোটি টাকা প্রদানের ঘোষণা প্রদান করেছিল। ভারত সরকার সে সময় বাংলাদেশকে ত্রাণ ও পুনর্বাসন কাজের জন্য ২৫০ মিলিয়ন ডলার সহযোগিতা প্রদান করে।

জাতিসংঘের ত্রাণ পরিচালনা কমিটি ১৯৭২ সালের এক প্রতিবেদনে যুদ্ধ পরবর্তী এক বছরের মাথায় দেশটিতে সুশৃংখল ও গণতান্ত্রিকভাবে পরিচালনার জন্য তৎকালীন সরকারকে ধন্যবাদ জানায়।

তৎকালীন মার্কিন দুতাবাস যুক্তরাষ্ট্র সরকারের কাছে পাঠানো এক বিশেষ প্রতিবেদনে জানায় যে, প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু সব কিছু তার নিয়ন্ত্রণে নিয়ে কাজ করতে সক্ষম হয়েছেন। বঙ্গবন্ধু যেভাবে প্রশাসনকে পুনঃবিন্যাস করেন তাতে মনে হয় নি বাংলাদেশ মাত্র এক বছর আগে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Must Read

সবাইকে মাদকের বিরুদ্ধে সক্রিয় হতে হবে, প্রধানমন্ত্রী

দ্যা নিউজ বিডি অনলাইন ডেস্ক: মাদকের বিরুদ্ধে সবাইকে সক্রিয় হওয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘আমরা যেমন উন্নত হচ্ছি, ঠিক তার পাশাপাশি মাদকের প্রভাবও...

শিবচরে নিয়ন্ত্রন হারিয়ে বাস খাদে, নিহত ১৭

দ্যা নিউজ বিডি অনলাইন ডেস্ক: পদ্মা সেতুর এক্সপ্রেসওয়ের মাদারীপুর জেলার শিবচরের কুতুবপুর এলাকায় ঢাকাগামী ইমাদ পরিবহনের একটি যাত্রীবাহী বাস খাদে পড়ে ১৭ জন যাত্রীর...

খুবই অস্বাস্থ্যকর’ বায়ু নিয়ে আজও দূষণের শীর্ষে ঢাকা

দ্যা নিউজ বিডি অনলাইন ডেস্ক: বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহরের তালিকার র্শীষে অবস্থান করছে রাজধানী ঢাকা। আবহাওয়ার পরিবর্তনসহ মানবসৃষ্ট নানা কারণে দিন দিন যেন ঢাকায় নির্মল...

ইমরান খানকে গ্রেপ্তারে, লাহোরে তীব্র উত্তেজনা, সংঘর্ষ

দ্যা নিউজ বিডি,আন্তর্জাতিক ডেস্ক: পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে পুলিশ তোষাখানা মামলায় গ্রেফতার করতে চাচ্ছে। তার বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি গ্রেফতারি পরোয়ানা থাকলেও এই একটি...

আজ পবিত্র শবে বরাত

দ্যা নিউজ বিডি অনলাইন ডেস্ক: আজ পবিত্র শবে বরাত । যথাযোগ্য ধর্মীয় মর্যাদায় ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা রাতে মহান আল্লাহর রহমত কামনায় নফল ইবাদত-বন্দেগীর মধ্য দিয়ে...