দেয়ালে দেয়ালে সাঁটা ডেঙ্গু প্রতিরোধকারী ওষুধের পোস্টার— তাতে দেওয়া আছে ফার্মেসির নাম,এমনকি টেলিফোন নম্বরও। যোগাযোগ করা হলে ওই হোমিও ফার্মেসির স্বত্বাধিকারী বলেন, ‘এক ফাইল ১০০ টাকা। এটি খেলে আর ডেঙ্গু হবে না। পরিবারের সবাইকে একসঙ্গে খেতে হবে।’ তবে পুরো বিষয়টিকেই প্রতারণা উল্লেখ করে চিকিৎসকরা বলছেন, তাই যদি হয়, তাহলে উনি বিশ্বের অনন্য আবিষ্কারক হিসেবে চিহ্নিত হবেন।বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এখনও এই রোগের প্রতিষেধক বের করতে না পারলেও ঢাকা মিরপুরে একজন হোমিও চিকিৎসক নির্দ্বিধায় দিয়ে যচ্ছেন, ডেঙ্গু রুখে দেওয়ার আশ্বাস। চিকিৎসকরা আরও বলছেন, হোমিও চিকিৎসা শাস্ত্রে কখনও প্রতিষেধকের কথা স্বীকার করা হয় না। যিনি হোমিও’র নামে এই ওষুধ দিচ্ছেন, তিনি নিজ শাস্ত্রের বিপরীতে কথা বলছেন। বোঝাই যাচ্ছে, এটা প্রতারণার একটি কৌশলমাত্র।
এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি উল্লেখ করে তারা বলছেন, মানুষ আতঙ্কের মধ্যে হিতাহিত জ্ঞন হারায়। সেই সুযোগ নিয়ে আর্থিক লাভবান হওয়া ব্যক্তিরা ক্ষতিকর। মিরপুর ১১ থেকে ১৪ নম্বর এলাকার দেয়ালে দেয়ালে এধরনের একাধিক হোমিও চিকিৎসকের দেখা মিলবে। তেমনই একটি মাইশা হোমিও।ফোনে যোগাযোগ করা হলে মাইশা হোমিও’র মালিক, যিনি নিজের নাম বলতে রাজি হননি, ১৪ নম্বরে থানার পাশে এসপি গলির ঠিকানা দেন। রোগী সেজে কী ওষুধ দেবেন জানতে চাইলে এই নারী চিকিৎসক (!) বলেন, যে ওষুধ খেলে ডেঙ্গু হবে না, তেমন ওষুধই আমি দিচ্ছি। এক ফাইল ১০০ টাকা। পরিবারের সবাইকে খেতে হবে। সকাল ১০টা থেকে সাড়ে ১২টা এবং সন্ধ্যা ৭টা থেকে তাকে চেম্বারে পাওয়া যাবে। ওষুধ টানা ১২ দিন খেতে হবে। তাতে কয়টি ফাইল লাগবে, তা অবশ্য তিনি বলতে রাজি হননি।
মিরপুর ৬ নম্বর বাজারের পাশের গলিতে পাওয়া গেলো পোস্টার সেঁটে বসে থাকা আরও এক হোমিও চিকিৎসককে। ডিজিটাল ব্যানারে তিনি দাবি করেছেন— তার কাছে ডেঙ্গু প্রতিরোধের ব্যবস্থা আছে। প্রথম দিন এই এলাকায় তিনি বিনা পয়সায় ডেঙ্গু প্রতিষেধক খাওয়ান এবং এরপর তার চেম্বারে গিয়ে ১২ দিনের ওষুধ খেতে হবে বলে জানান।
এই চিকিৎসকের ওষুধ খেয়েছেন এমন একজন আমিনুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘হঠাৎ দেখলাম এধরনের ক্যাম্পেইন। আমি জানি কোনও লাভ হবে না, কিন্তু তারপরও খেয়ে দেখলাম। ডেঙ্গু যদি ১০০ টাকায় থামিয়ে দেওয়া যায়, তাহলে তো তার আমেরিকায় থাকার কথা। গোটা দুনিয়া যে রোগ সামাল দিতে পারছে না, মিরপুরের এক হোমিও ব্যবসায়ী সেটা সারিয়ে দেবে? কিন্তু এমন অনেকে আছেন, যারা বিশ্বাস করে এই ওষুধ খাচ্ছেন।’
দেয়াল থেকে পাওয়া একটি নম্বরে কল দিয়ে মাইশা হোমিও’র স্বত্বাধিকারীর সঙ্গে কথা হয় বাংলা ট্রিবিউন প্রতিনিধির। তিনি বলেন, ‘তার কাছে যে ওষুধ আছে, সেটি খেলে ডেঙ্গু আক্রমণ করতে পারে না। এটা অনেকটা অ্যান্টিবায়োটিকের মতো।’ তিনি বলেন, ‘রোজ অনেকে এসে তার ওষুধ নিয়ে যাচ্ছেন। এক ফাইলের দাম ১০০ টাকা। কোনও সাইড ইফেক্ট নেই।’ঢাকা মেট্রোপলিটন হাসপাতালের হেমোটলজি স্পেশালিস্ট অ্যান্ড কনসালটেন্ট ডা. গুলজার হোসেন উজ্জ্বল এ বিষয়ে বলেন, ‘যারা বিশ্বাস করে খাচ্ছেন, বিপদটা তাদেরকে নিয়ে বেশি। তারা এটার ওপর ভরসা করবে এবং তার যা করণীয় ছিল, তা তিনি করবেন না। তিনি মনে করবেন, যেহেতু তিনি ডেঙ্গু প্রতিষেধক নিয়েছেন, ফলে তার আর কোনও সমস্যা হবে না। প্রতিষেধক আমরাও খুঁজছি। এমন হলে তো স্বাস্থ্য সংস্থা, আমেরিকান ফুড অ্যান্ড ড্রাগ হাজার কোটি টাকা দিয়ে পেটেন্ট কিনে নিতে চাইবে। কারণ, সারা পৃথিবী প্রতিষেধক খুঁজছে। ফলে রাস্তাঘাটে এধরনের উদ্যোগ বোঝাই যাচ্ছে, এটা পরিষ্কার প্রতারণা এবং এক ধরনের ব্যবসা ডা. উজ্জ্বল আরও বলেন, ‘হোমিওপ্যাথি শাস্ত্র মতে কোনও প্রতিষেধক নেই। তারা রোগীর চিকিৎসা করে, লক্ষণ দেখে চিকিৎসা করে। আগাম চিকিৎসা দেওয়াটা হোমিওপ্যাথি শাস্ত্রবিরুদ্ধ। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ, প্রেস ক্লাবের সামনে এধরনের পোস্টার- লিফলেট সেঁটে রাখতে দেখেছি। এর আগে যখন ডেঙ্গু প্রথম এলো, তখনও তারা এসব করেছে।’