Home টপ নিউজ ওয়াং-পা ঝর্না

ওয়াং-পা ঝর্না

“ওয়াং-পা ঝর্না”

ওয়াং-পা ঝর্না
ওয়াং-পা ঝর্না

লোক চক্ষুর আঁড়ালে বলার কারন হল যত মানুষ দামতুয়া ঝর্না দেখেছে, তার চেয়ে অনেক কম মানুষ দেখেছে এই ওয়াং-পা ঝর্নাটি। অনেকেই শুধু দামতুয়া দেখে চলে আসে। অথচ দামতুয়ার কাছাকাছিই এ্ই ঝর্নাটি। তার প্রমান মিলল ঐদিন আমরাসহ তিনটি টীম দামতুয়া গিয়েছিল। মূল রাস্তায় তাদের সাথে দেখা হয়ে জানতে পারলাম এখানে যে আরেকটি ঝর্না আছে, তা তারা জানেই না। দামতুয়া ঝর্না দেখে ফিরে আসার সময় দেখে নিতে পারেন লুকায়িত এই ওয়াং-পাকে। গাইড আমাদের তাড়া দিচ্ছে দ্রুত হাঁটার জন্য কারন আমাদের হাতে সময় কম। তিনি বলল, আমরা এক রাস্তা দিয়ে যাব, ওয়াং-পা ঝর্না দেখে অন্য রাস্তা দিয়ে বের হব। এভাবে গেলে আমাদের জন্য শর্টকাট হবে। আমরাও এক কথায় রাজী হয়ে গেলাম। এটাতো আরও ভালো কথা। কিন্তু আমাদের জন্য যে কি বিপদ অপেক্ষা করছে তা আমরা তখনও জানতাম না। যাইহোক, দামতুয়া ঝর্না দেখে ফেরত আসার সময় একটি পাড়া পরবে, যার নাম মেম্বার পাড়া। এই পাড়া ফেলে হাতের ডানে একটি সরু রাস্তা পাহাড়ের নিচের দিকে নেমে গেছে আর এই রাস্তা ধরে গেলেই দেখা মিলবে ওয়াং-পার। গাইডের পিছন পিছন আমরাও পাহাড়ি সরু রাস্তা ধরে নামতে লাগলাম। এমন রাস্তা দুজন পাশাপাশি দাঁড়ানো যাচ্ছে না, পাশেই আবার গভীর খাঁদ। গাইড হাঁটতে হাঁটতে তার হাতে থাকা দাঁ দিয়ে জঙ্গল পরিষ্কার করছে আমাদের জন্য। একটি জায়গায় এসে গাইড বলল এবার এই পাথরগুলোর উপর দিয়ে গেলেই ঝর্নার দেখা পাওয়া যাবে। ওই পরিবেশটা দেখেই আর যেতে ইচ্ছে করছে না। আমরা একজন আরেকজনের দিকে তাকাচ্ছি। একজন বলে উঠল, “আমি যাব না, আপনারা যান আমি এখানেই আছি।” তার সাথে সুর মিলালো আরও দুজন। তাদের কথা পড়তে না পড়তেই আরেকজন বলে উঠল, “এত কষ্ট করে এখানে এসেছি, তাহলে আমরা যাচ্ছি, আপনারা বসেন।” গাইডকে বললাম রাস্তা দেখান। দেখি প্রকৃতির টানে আর ঝর্নার মায়ায় তারাও আমাদের পিছু পিছু হাঁটছে। দামতুয়া থেকে ঘন্টা দেড়েক হাঁটার পর সবাই মিলে শেষ পর্যন্ত পৌছলাম ওয়াং-পার কাছে। সতিই ওয়াং-পা নিজেকে এভাবে লুকিয়ে রাখার কারনেই বোধ হয়, তুমি এখনও এত সুন্দর আর দৃষ্টিনন্দন। আমাদের আবার ঝর্নায় শরীর না ভিজালে ভালো লাগে না, বেশিরভাগ বাঙ্গালী ট্রেকাররই একই অবস্থা। কিন্তু বাঁধা হয়ে দাঁড়ালো ঝর্নায় যাওয়ার সময় খাঁড়া দেওয়াল। প্রায় ৮০ ডিগ্রী খাঁড়া দেওয়ালে উঠে ঝর্নার সামনে যেতে হবে। সাথে দড়ি থাকায় খুব একটা ঝামেলায় পড়তে হল না। বড় খাঁড়া দেওয়াল বেয়ে প্রচন্ড বেগে পানি পড়ছে ওয়াং-পার। পানি পড়ার শব্দে মুখরিত হয়ে আছে চারপাশ। তার গঠনশৈলী এনে দিয়েছে তাকে অন্য মাত্রার এক রুপ। যে রুপ অন্য কোন ঝর্নার সাথে চাইলেও মিলাতে পারবেন না। দেওয়ালে হেলান দিয়ে ইচ্ছেমত ভিজিয়ে নিতে পারবেন নিজেকে। এবারও গাইডের ডাক পড়লো ফেরার জন্য। আমরা যখনই গা ভিজাতে ভিজাতে সময় ভুলে যাই, তখনই গাইডের ডাক আমাদের মনে করিয়ে দেয়, ফিরতে হবে আমাদের, আজই আবার যেতে হবে নিজ বাসভবনে। ফেরার পথে অন্য রাস্তা ধরলাম। অর্ধেক আসার পর মনে হচ্ছে যেন আমাদের মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়েছে। গাইড বলছে এখানে একটা রাস্তা ছিল যা পাহাড় ধসের কারনে আর নেই। এবার উপায় কি? যেই রাস্তা দিয়ে এসেছি সেই রাস্তা দিয়ে যেতে কেউ রাজী নয়। কারন হাঁটতে হবে অনেকটা পথ, সময়ও নেই কিছুক্ষণ পরই সন্ধ্যা নামবে। আবার রাস্তাও বেশি সুবিধার না। তাই সাথে থাকা দড়িই ভরসা। গাইডকে দিয়ে দড়ি বেঁধে দিলাম একটি বড় গাছে। নীচে ফেলা হল দড়ি পালাক্রমে সাবধানে উঠতে থাকল পুরো টীম। পাথরগুলো ছিল ঝুরঝুরে এজন্য পা রাখতেও ভরসা পাচ্ছিল না কেউ। একেই বোধ হয় বলে এডভেঞ্চার। কোন মতে সবাই আস্তে আস্তে উঠে গেলাম সেই পাহাড়ে, মিলল রাস্তা। এই যাত্রায় বেঁচে গেলাম দড়ির কারনে। সেখান থেকে প্রায় ৩০ মিনিট হাঁটার পর পৌঁছে গেলাম আদুপাড়ার মুল রাস্তায়। আর এভাবেই শেষ হয়ে গেল লোক চক্ষুর আঁড়ালে থাকা ওয়াং-পা দর্শন।
কিছু টিপসঃ
১) বান্দরবানের আলীকদম থেকে এই ঝর্নায় যেতে হয়। দামতুয়া ঝর্না দেখার উদ্দেশ্য নিয়ে গেলে, একই সাথে এটি দেখে আসতে পারবেন। সেক্ষেত্রে গাইডকে অতিরিক্ত টাকা দিতে হবে না। কিন্তু গাইড নেওয়ার সময় অবশ্যই তাকে ওয়াং-পার কথা বলে নিবেন।
২) সাথে বড় দড়ি রাখুন, তাহলে ঝর্নার কাছে যেতে কষ্ট হবে না। না হয় খাঁড়া দেওয়াল আপনার বাঁধা হয়ে দাঁড়াতে পারে।
৩) এই ঝর্না দেখার জন্য বর্ষাকালই বেস্ট। তবে বর্ষায় গেলে ট্রেইলটিতে জোঁক পাবেন, তাই সাথে লবন রাখতে পারেন।
৪) মাঝখানে কোন দোকান-পাট নেই, তাই ট্রেকিংয়ের সময় সাথে শুকনো খাবার এবং পানি রাখুন।
৫) এই ঝর্নায় পর্যটকের আনাগোনা কম। তাই এখনও অনেক পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন। দয়াকরে ঘুরতে গিয়ে কেউ ময়লা-আবর্জনা ফেলে আসবেন না।
আমাদের ওয়াং-পা ভ্রমনটি সম্পর্কে বিস্তারিত দেখতে নিচের লিংকে ক্লিক করে ভিডিওটি দেখতে পারেন:

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Must Read

সবাইকে মাদকের বিরুদ্ধে সক্রিয় হতে হবে, প্রধানমন্ত্রী

দ্যা নিউজ বিডি অনলাইন ডেস্ক: মাদকের বিরুদ্ধে সবাইকে সক্রিয় হওয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘আমরা যেমন উন্নত হচ্ছি, ঠিক তার পাশাপাশি মাদকের প্রভাবও...

শিবচরে নিয়ন্ত্রন হারিয়ে বাস খাদে, নিহত ১৭

দ্যা নিউজ বিডি অনলাইন ডেস্ক: পদ্মা সেতুর এক্সপ্রেসওয়ের মাদারীপুর জেলার শিবচরের কুতুবপুর এলাকায় ঢাকাগামী ইমাদ পরিবহনের একটি যাত্রীবাহী বাস খাদে পড়ে ১৭ জন যাত্রীর...

খুবই অস্বাস্থ্যকর’ বায়ু নিয়ে আজও দূষণের শীর্ষে ঢাকা

দ্যা নিউজ বিডি অনলাইন ডেস্ক: বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহরের তালিকার র্শীষে অবস্থান করছে রাজধানী ঢাকা। আবহাওয়ার পরিবর্তনসহ মানবসৃষ্ট নানা কারণে দিন দিন যেন ঢাকায় নির্মল...

ইমরান খানকে গ্রেপ্তারে, লাহোরে তীব্র উত্তেজনা, সংঘর্ষ

দ্যা নিউজ বিডি,আন্তর্জাতিক ডেস্ক: পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে পুলিশ তোষাখানা মামলায় গ্রেফতার করতে চাচ্ছে। তার বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি গ্রেফতারি পরোয়ানা থাকলেও এই একটি...

আজ পবিত্র শবে বরাত

দ্যা নিউজ বিডি অনলাইন ডেস্ক: আজ পবিত্র শবে বরাত । যথাযোগ্য ধর্মীয় মর্যাদায় ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা রাতে মহান আল্লাহর রহমত কামনায় নফল ইবাদত-বন্দেগীর মধ্য দিয়ে...