দ্বিতীয়বার প্রধানমন্ত্রী হওয়ার ৭৫ দিনের মধ্যে নেওয়া মোদি সরকারের সবচেয়ে বড় সিদ্ধান্তের মধ্যে অন্যতম হল জম্মু ও কাশ্মীরে সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিল করা এবং দু’টি নতুন কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল তৈরি করা। ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিলের সিদ্ধান্তটি অনেকেই স্বাগত জানিয়েছেন, তবে যেভাবে এটি করা হয়েছে তা নিয়ে সমালোচনার মুখোমুখিও হয়েছে কেন্দ্র সরকার।
সংবাদ সংস্থা আইএএনএস জম্মু ও কাশ্মীরে এই পদক্ষেপের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সাথে সাক্ষাতকারটি দেয়া হলো-
আইএএনএস: আপনি কী মনে করেন জম্মু কাশ্মীরের মানুষ আপনার সঙ্গে আছে?
প্রধানমন্ত্রী মোদি: কাশ্মীর সম্পর্কে নেওয়া সিদ্ধান্তের যারা বিরোধিতা করেছেন তারা হলো সাধারণ স্বার্থান্বেষী মানুষ, রাজনৈতিক রাজবংশ, যারা সন্ত্রাসের প্রতি সহানুভূতিশীল এবং বিরোধী দলের কিছু বন্ধুবান্ধব। ভারতের জনগণ তাদের রাজনৈতিক পছন্দ নির্বিশেষে, জম্মু, কাশ্মীর এবং লাদাখে গৃহীত পদক্ষেপগুলিকে সমর্থন করেছে। এটা জাতির ভালোর জন্য, এতে রাজনীতি নেই। ভারতের মানুষ দেখছে যে, ব্যাপারটা কঠিন কিন্তু অত্যাবশ্যকীয় সিদ্ধান্ত। যা আগে অসম্ভব বলে ধরে নেওয়া হয়েছিল তা বাস্তবে পরিণত হচ্ছে।
সামনে পথ কতটা সরু কতটাই বা প্রশস্ত এই বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী মোদি জানান, কীভাবে এই বিধানগুলি ভারতের ক্ষতি করেছে। এটি এখন সবার কাছে স্পষ্ট হয়ে গেছে যে কীভাবে ৩৭০ এবং ৩৫ (এ) জম্মু, কাশ্মীর এবং লাদাখককে সম্পূর্ণভাবে বিচ্ছিন্ন করেছে। দীর্ঘ সাত দশকে ‘স্পেশ্যাল স্টেটাস’ সুস্পষ্টভাবেই মানুষের আকাঙ্ক্ষাকে পূরণ করতে পারেনি। নাগরিকদের উন্নয়নের ফল থেকে দূরে রাখা হয়েছিল। সবচেয়ে বড় বাজে বিষয় হল উপার্জন বাড়াতে কোনও সঠিক অর্থনৈতিক সুযোগেরই অভাব ছিল এই অঞ্চলে। আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি আলাদা, দারিদ্র্যের চক্র ঘুচিয়ে জনগণকে আরও বেশি অর্থনৈতিক সুযোগ দিতে হবে। বছরের পর বছর ধরে হুমকিরাজ চলেছে। আসুন এখন আমরা উন্নয়নকে সুযোগ করে দিই।
তিনি আরও ব্যাখ্যা করেন: ‘জম্মু, কাশ্মীর এবং লাদাখের আমার বোনরা এবং ভাইরা সর্বদাই একটি উন্নত ভবিষ্যত চেয়েছিল, কিন্তু ৩৭০ অনুচ্ছেদ তা দিতে পারেনি। নারী ও শিশু, উপজাতিদের উপর অবিচার চলছিল। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, জম্মু, কাশ্মীর ও লাদাখের মানুষের উদ্ভাবনী উদ্যোগকেই প্রাধান্যতা দেওয়া হয়নি। এখন বিপিও থেকে শুরু করে খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ, পর্যটন অনেক শিল্পই বিনিয়োগের সুযোগ পেতে পারে এবং স্থানীয় যুবকদের জন্য সুযোগ তৈরি করতে পারে। শিক্ষা ও দক্ষতার বিকাশও ফুলেফেঁপে উঠবে। আমি জম্মু, কাশ্মীর এবং লাদাখের আমার বোন এবং ভাইদের স্পষ্টভাবে আশ্বস্ত করতে চাই যে এই অঞ্চলগুলি স্থানীয় জনগণের ইচ্ছা, তাদের স্বপ্ন এবং আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ীই উন্নতি করবে। এই অঞ্চলের বৃদ্ধি প্রথম এবং সর্বক্ষেত্রে এই অঞ্চলের সম্প্রদায়ের দ্বারা পরিচালিত হবে। ৩৭০ এবং ৩৫ (এ) শৃঙ্খলার মতো ছিল যা মানুষকে বেঁধে রাখত। এই শৃঙ্খলা এখন ভেঙে গেছে, মানুষ এখন নিজেই নিজের ভাগ্যকেই বদলাবে।
আইএএনএস: আর যারা জম্মু ও কাশ্মীরের এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করছেন তাঁরা কী বলবেন?
প্রধানমন্ত্রী মোদি তাঁদের উদ্দেশে একটি প্রাথমিক প্রশ্ন রেখেছেন: আর্টিকেল ৩৭০ এবং ৩৫ এ থাকা উচিৎ কেন বলে তাঁদের মনে হচ্ছে?
মোদির কথায়, তাদের এই প্রশ্নের কোনও উত্তর নেই। এই প্রশ্ন তোলা মানুষগুলো আসলে একই ব্যক্তিরা যারা সাধারণ মানুষের সহায়তার পরিপন্থী, সবকিছুতেই তারা প্রতিবাদ করতে অভ্যস্ত। জনগণকে পানি সরবরাহ করার একটি প্রকল্প রয়েছে, তারা এটারও বিরোধিতা করবে। রেললাইন নির্মাণ হচ্ছে, তারা তারও বিরোধিতা করবে। তাদের মন কেবল মাওবাদী ও সন্ত্রাসবাদীদের জন্য কাঁদে। প্রতিটি ভারতীয় আজ জম্মু, কাশ্মীর ও লাদাখের জনগণের পাশে দাঁড়িয়েছে এবং আমি নিশ্চিত যে জনগণ আমাদের পাশে থাকবে।