দ্যা নিউজ বিডি অনলাইন ডেস্ক: জ্বালানি তেলের পর এবার বিদ্যুৎ, গ্যাস ও সারের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। বলা হয়েছে, এই তিন পণ্যের দাম সমন্বয় বা বৃদ্ধি করা না হলে বাজেটে ভর্তুকি ব্যয় অনেক বেড়ে যাবে। যার পরিমাণ হতে পারে মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপির ২ শতাংশ। ফলে টাকার অঙ্কে ভর্তুকি ব্যয় বাজেটে প্রক্ষেপণের চেয়ে ২০ থেকে ২৫ হাজার কোটি টাকা বৃদ্ধি পেতে পারে। তাই সরকারের উচিত ২০২২ সালের শুরুতে এসবের দাম সমন্বয় করা। অন্ততপক্ষে, বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম দ্রুত বাড়ানোর পরামর্শ দেয়া হয়েছে। গতকাল দুপুরে অর্থমন্ত্রীর সভাপতিত্বে ‘বাজেট মনিটরিং ও সম্পদ কমিটি’র বৈঠকে অর্থ বিভাগ থেকে দাম সমন্বয়ের প্রস্তাব দেয়া হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট এক সূত্র জানিয়েছে। তবে এ বিষয়ে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, সবার সাথে আলোচনা করে এ বিষয়ে দ্রুত সিদ্ধান্তে আসা হবে। চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে ভর্তুকি, প্রণোদনা ও ঋণ বাবদ ৪৯ হাজার কোটি টাকা নির্ধারিত রয়েছে।জানা গেছে, বাজেট মনিটরিং সভায় আগামী ২০২২-২৩ অর্থবছরে বাজেটে আকারের একটি প্রক্ষেপণ করা হয়েছে। আগামী অর্থবছরের জন্য বাজেটে প্রাথমিক আকার ধরা হয়েছে ছয় লাখ ৭৫ হাজার ১৩৯ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে যা রয়েছে ছয় লাখ তিন হাজার ৬৮১ কোটি টাকা। আগামী অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে সাড়ে ৭ শতাংশ । চলতি অর্থবছরে যা রয়েছে ৭ দশমিক ২ শতাংশ। আগামী অর্থবছরে মূল্যস্ফীতি ধরা হয়েছে সাড়ে ৫ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে যা রয়েছে ৫ দশমিক ২ শতাংশ। বাজেট ঘাটতি ধরা হয়েছে সাড়ে ৫ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে যা রয়েছে ৬ দশমিক ১ শতাংশ।
বৈঠক সংশ্লিষ্ট এক সূত্র এ বিষয়ে জানিয়েছে, বৈঠকে বলা হয়েছে, দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ভালো অবস্থায় রয়েছে। রেমিট্যান্স ছাড়া, আমদানি, রফতানি, এডিপি বাস্তবায়ন ও রাজস্ব আদায়ের হার ভালো রয়েছে। কিন্তু চিন্তায় ফেলে দিয়েছে সার্বিক ভর্তুকি ব্যয়। এই ভর্তুকি কমানোর জন্য বিদ্যুৎ, সার ও গ্যাসের দাম সমন্বয় (বৃদ্ধি) করার প্রয়োজন রয়েছে। তা না হলে বাজেটের ওপর চাপ বেড়ে যাবে। আর্থিক খাত একটি বিশৃঙ্খলার মধ্যে পড়তে পারে। তাই সারের দাম না হলেও গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম যেন আগামী বছরের শুরুতেই সমন্বয় করা হয়।সূত্র জানায়, এ সময় অর্থমন্ত্রীর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, দাম সমন্বয় করার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্টদের সাথে আলাপ আলোচনার প্রয়োজন হবে। তবে এ বিষয়ে একটি সিদ্ধান্ত দ্রুতই নেয়া হবে।গ্যাস, তেল ও সারের দাম বাড়ানো হলে মূল্যস্ফীতি আরো বাড়বে কিনা এ প্রশ্ন করা হলেও অর্থ বিভাগের এক কর্মকর্তা যুক্তি দেখান, দাম বাড়ানোর পর মূল্যস্ফীতি বাড়লেও ধীরে ধীরে তা কমে আসে। তাই মূল্যস্ফীতি নিয়ে আমরা আদৌ চিন্তিত নই। আমাদের চিন্তা ভর্তুকি নিয়ে। ভর্তুকির পরিমাণ বেড়ে গেলে অর্থনীতি তার চাপ সামলাতে পারবে না।উল্লেখ্য, আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম বৃদ্ধির কারণ দেখিয়ে সরকার গত ৪ নভেম্বর ডিজেল ও কেরোসিনের দাম লিটারপ্রতি ২৩ শতাংশ বা ১৫ টাকা বাড়িয়ে ৮০ টাকা নির্ধারণ করে দেয়। ফলে এক লিটার ডিজেল ও কেরোসিন তেলের দাম ৬৫ টাকা থেকে বেড়ে ৮০ টাকায় দাঁড়ায়। তখন জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছিল, বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ছে এবং এই
ঊর্ধ্বগতির কারণে সরকার এ দাম সমন্বয় করেছে। আরো বলা হয়েছে, বর্তমান ক্রয়মূল্য বিবেচনা করে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন ডিজেলে লিটার ১৩ দশমিক ০১ টাকা এবং ফার্নেস অয়েলে লিটার প্রতি ৬ দশমিক ২১ টাকা কমে বিক্রি করায় প্রতিদিন ২০ কোটি টাকা লোকসান দিচ্ছে। অক্টোবর মাসেই ৭২৬ কোটি টাকার লোকসান হয়েছে বলে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে। অবশ্য জ্বালানি তেলে যে অঙ্কের লোকসান হয় বলে দাবি করা হয় তার চেয়ে বেশি তেল থেকে শুল্ক আদায় করা হয়।মজার ব্যাপার হচ্ছে, সরকার যখন তেলের দাম বৃদ্ধি করে তখন আন্তর্জাতিক বাজারে এই পণ্যের দাম ব্যারেল প্রতি ৮০ ডলারের কাছাকাছি ছিল। কিন্তু তারপর থেকেই বিশ্ববাজারে ধারাবাহিকভাবে তেলের দাম কমা শুরু হয়েছে। বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম আরো কমতে পারে এমন খবর জানা যায় গত মাসে। প্রতি ব্যারেল ৮০ ডলারে বৃদ্ধি গত কয়েক মাসে ধারাবাহিকভাবে কমতে শুরু করে। আজ হঠাৎ করে এক দিনের ব্যবধানে অপরিশোধিত তেলের দর কমেছে চার শতাংশের বেশি। গত মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রের ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েটের (ডব্লিউটিআই) দাম কমেছে ৪ দশমিক ৮১ শতাংশ বা ৩ দশমিক ৪১ মার্কিন ডলার। এদিন প্রতি ব্যারেল ডব্লিউটিআই বিক্রি হয়েছে ৬৭ দশমিক ৪৫ ডলারে। বিশ্লেষকদের মতে, বিশ্বজুড়ে ওমিক্রন সংক্রমণ দ্রুত বাড়তে থাকা এবং ইউরোপ-যুক্তরাষ্ট্রে সামাজিক বিধিনিষেধ ফিরে আসায় আবারো তেলের চাহিদা কমে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।